মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০- নতুন ফিচার ও সুবিধা

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলির মধ্যে একটি হলো মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম। এই সফটওয়্যার দিয়েই "বিল গেটস" এর কোম্পানি বহু বছর আগে প্রযুক্তির জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, এবং আজও সেই প্রভাব বজায় রেখেছে। ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, উইন্ডোজ ৭ এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২১০ কোটির বেশি।


ভূমিকা

যদিও উইন্ডোজ ৮ তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি, তবে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কয়েক কোটি। উইন্ডোজ এক্সপি, ভিস্তা সহ অন্যান্য সংস্করণগুলির ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কয়েক শত কোটি। তাই উইন্ডোজের কোন আপডেট মানেই বিশাল খবর।

উইন্ডোজ ৮ থেকে সাড়া না পাওয়ার কারণে, মাইক্রোসফট হঠাৎ করেই উইন্ডোজ ৯ এর পরিবর্তে উইন্ডোজ ১০ আনার ঘোষণা দেয়। ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই উইন্ডোজ ১০ রিলিজ হয়। এই সংস্করণে ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন ও আকর্ষণীয় ফিচার যুক্ত হয়েছে।

উইন্ডোজ ১০ এর নতুন ফিচার

উইন্ডোজ ১০-এ প্রকল্পিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নতুন ফিচার রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য উপকারী এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা সুধারের লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয়েছে। এই নতুন ফিচারগুলির মধ্যে স্টার্ট মেনুর সংস্করণ, যা ব্যবহারকারীদের অ্যাপস এবং সিস্টেম সেটিংসের দিকে সহজ অ্যাক্সেস প্রদান করে। এছাড়াও, নতুন গেইমিং মোড গেমারদের জন্য গেমিং পারফরমেন্স সহায়ক এবং ট্যাস্কবারের পরিস্কারতা বাড়াতে সহায়ক হয়। আগামীতে উইন্ডোজ ১০-এ সহজ আপডেট প্রক্রিয়া এবং সিকিউর লগইনের মতো নতুন সুরক্ষা ফিচারগুলির সহযোগিতা আরও বাড়াতে পারে। এই সব পরিবর্তন কার্যকর এবং ব্যবহারকারীদের উইন্ডোজ অভিজ্ঞতা আরও অনুভূতি সমৃদ্ধ করে তুলছে।

গতি

উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অনেক দ্রুতগতির। পূর্ববর্তী অপারেটিং সিস্টেমগুলোর তুলনায় এটি অনেক এগিয়ে। উইন্ডোজ ১০ এ পিসি স্টার্ট হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়, এবং এটি দ্রুতগতিতে ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারে। উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমটি অনেক দ্রুতগতির।পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর তুলনায় এটি পিসি স্টার্টআপের সময় কম নেয় এবং ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে দ্রুতগতি প্রদর্শন করে। এর স্টার্টআপ টাইম মাত্র কয়েক সেকেন্ড, যা ব্যবহারকারীদের কাজের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এই গতি ও পারফরম্যান্স উন্নতি ব্যবহারকারীদের কাজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে।

স্টার্ট মেন্যু

উইন্ডোজ ৮ এ স্টার্ট মেন্যু বাদ দেওয়ায় মাইক্রোসফট বেশ সমালোচনার শিকার হয়। পরবর্তী সংস্করণ উইন্ডোজ ৮.১ এ স্টার্ট মেন্যু ফিরিয়ে আনা হলেও কিছু সিস্টেমের অভাব ছিল। তাই উইন্ডোজ ১০ এ স্টার্ট মেন্যুকে নতুন আঙ্গিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যেখানে অ্যাপ্লিকেশন লিস্টের সঙ্গে অ্যাপ টাইল যুক্ত করা হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সহজ এবং কার্যকরী। স্টার্ট মেন্যুর এই নতুন বিন্যাসটি ব্যবহারকারীদের দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে পেতে এবং ব্যবহারে সহায়তা করে।

কর্টানা

মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ এ কর্টানা নামক একটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত করেছে, যা অ্যাপল এর সিরি এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মত কাজ করে। কর্টানা ব্যবহার করে আপনি মুখে বলেই আপনার পছন্দের ছবি, গান বা অন্যান্য তথ্য খুঁজে নিতে পারবেন। এটি আপনাকে রেস্টুরেন্টের ঠিকানা, অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ ইত্যাদি জানিয়ে দেবে। মাইক্রোসফট স্টোর উইন্ডোজ ১০ এ মাইক্রোসফট স্টোর উন্নত করা হয়েছে, যেখানে আপনি অনেক মজার অ্যাপ এবং গেম ডাউনলোড করতে পারবেন।

টাচ স্ক্রিন

উইন্ডোজ ১০ স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে ব্যবহার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। টাচস্ক্রিন ডিভাইসে এটি ব্যবহার করা অনেক সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। উইন্ডোজ ১০ এর টাচ ইন্টারফেসটি স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে তারা সহজেই বিভিন্ন ফিচার এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারে। 

টাচস্ক্রিন ডিভাইসের জন্য উপযোগী এই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহারকারীদের জন্য উন্নত এবং সুবিধাজনক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর ইন্টারফেসটি সহজেই ব্যবহারযোগ্য এবং দ্রুতগতির, যা ব্যবহারকারীদের কাজের গতি বাড়ায়।

অ্যাকশন সেন্টার

উইন্ডোজ ১০ এর অ্যাকশন সেন্টার ম্যাক ওএস এর নোটিফিকেশন সেন্টারের মতো কাজ করে। এখানে আপনি মেইল, অ্যাপ আপডেট, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নোটিফিকেশন পাবেন। অ্যাকশন সেন্টার ব্যবহারকারীদের নোটিফিকেশনগুলি এক জায়গায় সংগৃহীত করে, যা তাদের জন্য সহজ এবং দ্রুত এক্সেসযোগ্য করে তোলে।

এছাড়াও, অ্যাকশন সেন্টার রিমাইন্ডার এবং অন্যান্য নোটিফিকেশন পরিচালনার সুবিধা প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক। উইন্ডোজ ১০ এর এই ফিচারটি ব্যবহারকারীদের সব ধরনের আপডেট এবং তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে, যা তাদের কাজের গতি এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

মাইক্রোসফট এজ

উইন্ডোজ ১০ এ মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার যুক্ত করা হয়েছে, যা দ্রুতগতি এবং নিরাপত্তার দিক থেকে উন্নত। মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারটি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য দ্রুত এবং নিরাপদ ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি উন্নত নিরাপত্তা ফিচার সহ আসে, যা ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

মাইক্রোসফট এজ এর গতির দিক থেকে উন্নত হওয়ায় এটি ওয়েব পেজ লোড করতে কম সময় নেয় এবং ব্যবহারকারীদের দ্রুততার সাথে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে দেয়। এছাড়াও, এর ইন্টারফেসটি সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব, যা ব্রাউজিং অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।

সিকিউরিটি মেইনটেনেন্স

উইন্ডোজ ১০ এ সিকিউরিটি মেইনটেনেন্স এর জন্য Device Guard, Microsoft Passport, এবং Windows Hello এর মতো সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। Device Guard ব্যবহারকারীদের ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার এবং অন্যান্য ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখে। Microsoft Passport পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে বায়োমেট্রিক বা পিন ব্যবহার করে লগইন করার সুযোগ প্রদান করে।

যা ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টকে আরও সুরক্ষিত করে তোলে। Windows Hello এর মাধ্যমে ফেস রিকগনিশন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং এবং আইরিস স্ক্যানিং এর সুবিধা পাওয়া যায়, যা লগইন প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং নিরাপদ করে। এই সব সুবিধার মাধ্যমে উইন্ডোজ ১০ এর সিকিউরিটি সিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়েছে।

ভার্চুয়াল ডেস্কটপ

উইন্ডোজ ১০ এ ভার্চুয়াল ডেস্কটপ সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে, যা মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সাহায্যে ব্যবহারকারীরা একসঙ্গে অনেকগুলো ডেস্কটপ ওপেন করে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। এক অ্যাপ্লিকেশন থেকে অন্য অ্যাপ্লিকেশনে দ্রুত স্যুইচ করা যায়, যা কাজের গতি এবং দক্ষতা বাড়ায়। 

ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজকে আরো সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এই ফিচারটি ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ, কর্টানা সার্চ বারের পাশের আইকনে ক্লিক করলেই ভার্চুয়াল ডেস্কটপ সিস্টেম চালু হয়ে যাবে।

এক্সবক্স অ্যাপ

এক্সবক্স অ্যাপটি উইন্ডোজ ১০-এ খুব সহজেই ইনস্টল করা যায় এবং এর মাধ্যমে আপনি অনেক গেমস পিসি তে খেলতে পারবেন। এটি Xbox Live এর সাথে সংযুক্ত এবং অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা খেলা করতে পারেন এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের গেম পাওয়া যায়। অনেক প্রজন্মের গেম ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি প্রিয় প্লাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।

এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোফাইল ম্যানেজ করতে পারবেন, ফ্রেন্ডস লিস্ট দেখতে পারবেন এবং বিভিন্ন মাল্টি-প্লেয়ার গেমস খেলতে পারবেন। এক্সবক্স অ্যাপ একটি পর্যায়ক্রমে সমৃদ্ধ গেমিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে এবং গেমারদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।শিডিউল রিস্টার্ট উইন্ডোজ ১০ এ শিডিউল রিস্টার্ট সুবিধা রয়েছে, যা আপনার পিসি রিস্টার্ট সময় নির্ধারণ করতে দেয়।

আইরিস স্ক্যানার

উইন্ডোজ ১০ এর সাথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং এর পাশাপাশি আইরিস স্ক্যানিং সুবিধা রয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং দিয়ে আপনি আপনার ফিংগারপ্রিন্ট ব্যবহার করে সিকিউরলি লগইন করতে পারেন এবং আইরিস স্ক্যানিং দিয়ে আপনি আপনার আইডি বা চেহারা স্ক্যান করে লগইন করতে পারেন। এই সুবিধাগুলি সুরক্ষা প্রযুক্তিতে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার মানসম্পন্নতায় অবদান রাখে।

DirectX-12

উইন্ডোজ ১০ এ DirectX-12 যুক্ত করা হয়েছে, যা গেম এবং থ্রিডি অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে গতি বাড়াতে সহায়ক। DirectX-12 এর মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রযুক্তিগত সুধার পায় এবং সম্পর্কিত হার্ডওয়্যার থেকে সর্বোচ্চ ফলস্বরূপ পায়। এটি গেমারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণে এটি খেলার গতি এবং পারফরমেন্সের উন্নতি সাধারণত দেয়। এছাড়াও, DirectX-12 এর মাধ্যমে থ্রিডি অ্যাপ্লিকেশনগুলিতেও অত্যন্ত ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, যেটি সম্প্রতি উন্নত গ্রাফিক্স এবং কার্যকরী সামগ্রী প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

ট্যাবলেট মোড

উইন্ডোজ ১০-এ ট্যাবলেট মোডে, ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক একটি ইন্টারফেস সরবরাহ করে। এই মোডে ব্যবহারকারীরা স্ক্রিনে স্পর্শ করে নেভিগেট করতে পারেন এবং বিভিন্ন সহজে পৌঁছাতে পারেন, যেমন স্টার্ট মেনু, ব্যাক বাটন, কর্টানা, এবং টাস্ক সুইচার বাটন। এই বাটনগুলি সহজে অ্যাক্সেস করা যায় এবং তা ব্যবহারকারীদের জন্য অভিজ্ঞতা সহজ করে তোলে। 

ফোন বা ট্যাবলেটে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে হলে, এই ইন্টারফেস সাহায্য করে প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য সহজ ও পরিচিত অনুভূতি তৈরি করে তোলে।ফোন কম্প্যানিয়ন উইন্ডোজ ১০ এ ফোন কম্প্যানিয়ন অ্যাপ রয়েছে, যা অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

গেট হেল্প

উইন্ডোজ ১০-এ গেট হেল্প অ্যাপ রয়েছে, যা অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে সহায়িকা প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যার সমাধান প্রদান করতে সাহায্য করে। উইন্ডোজ ১০-এ কীবোর্ড শর্টকাটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কাজগুলি তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারেন। নতুন সংস্করণে, কমান্ড প্রম্পটে (Command Prompt) ব্যবহারকারীরা Copy (CTRL+C), Paste (CTRL+V) এবং অন্যান্য শর্টকাট কীবোর্ড দ্বারা কাজ সম্পাদন করতে পারেন, যা অন্তত আগের সংস্করণে উপলব্ধ ছিল না। এই ফিচার ব্যবহারকারীদের কাজের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url