কম্পিউটার কাকে বলে কম্পিউটারের ইতিহাস বিস্তারিত জানুন

কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করতে পারে। এটি নির্দেশাবলী অনুসরণ করে কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে




ভূমিকা

কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা তথ্য প্রক্রিয়া করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি অতি দ্রুত ও সঠিকভাবে গণনা করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। কম্পিউটার বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাবিদ্যা, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন এবং যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিসীম।

কম্পিউটার এর সংজ্ঞা

কম্পিউটার শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ "computare" থেকে, যার অর্থ হলো গণনা করা। সাধারণভাবে, কম্পিউটার হলো একটি প্রোগ্রামেবল যন্ত্র যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, এবং উপস্থাপন করতে পারে। এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তথ্য গ্রহণ করে, প্রক্রিয়া করে এবং ফলাফল প্রদান করে।

কম্পিউটারের ইতিহাস

কম্পিউটারের ইতিহাস অনেক পুরনো। আদিম কম্পিউটার ছিল ম্যানুয়াল ডিভাইস, যেমন অ্যাবাকাস। এরপর চার্লস ব্যাবেজ ১৯ শতকের প্রথম দিকে "অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন" নামে একটি মেকানিক্যাল কম্পিউটার ডিজাইন করেন, যা আধুনিক কম্পিউটারের পূর্বসূরি বলে মনে করা হয়।
এরপর ১৯৪০-এর দশকে প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি হয়। ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) ছিল প্রথম সাধারণ উদ্দেশ্য ইলেকট্রনিক কম্পিউটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল।

কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটার বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন-
সুপারকম্পিউটার: অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগামী কম্পিউটার যা বিশাল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম। এটি সাধারণত বিজ্ঞান গবেষণা, আবহাওয়া পূর্বাভাস, এবং অন্যান্য জটিল সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার: 

বড় ব্যবসা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত শক্তিশালী কম্পিউটার যা বড় আকারের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম।

মিনিকম্পিউটার:

মেইনফ্রেম এবং মাইক্রোকম্পিউটার এর মধ্যবর্তী আকারের কম্পিউটার, যা ছোট ব্যবসা ও গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রোকম্পিউটার: এটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC) নামেও পরিচিত। এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন অফিস কাজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেম খেলা ইত্যাদি।
কম্পিউটারের উপাদান
কম্পিউটার মূলত তিনটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত:
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU): এটি কম্পিউটারের মস্তিষ্ক, যা সমস্ত গণনা ও প্রক্রিয়াকরণ কাজ সম্পন্ন করে। CPU দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:
অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট (ALU): এটি সমস্ত গণিত ও লজিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন করে।
কন্ট্রোল ইউনিট (CU): এটি নির্দেশাবলী পাঠ করে এবং সেগুলি সম্পাদন করতে CPU-কে নির্দেশ দেয়।
মেমরি (RAM এবং ROM): মেমরি হলো তথ্য সংরক্ষণের স্থান।
RAM (Random Access Memory): এটি অস্থায়ী মেমরি, যা কম্পিউটার চালু থাকা অবস্থায় ডেটা সংরক্ষণ করে।
ROM (Read-Only Memory): এটি স্থায়ী মেমরি, যা শুধুমাত্র পড়া যায় এবং পরিবর্তন করা যায় না।

ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস:

ইনপুট ডিভাইস: যেমন কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, যা কম্পিউটারে ডেটা প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
আউটপুট ডিভাইস: যেমন মনিটর, প্রিন্টার, যা প্রক্রিয়াকৃত ডেটা প্রদর্শন বা প্রিন্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

কম্পিউটারের ব্যবহার

কম্পিউটার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়:
শিক্ষাবিদ্যা: শিক্ষাবিদ্যায় কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অনলাইন কোর্স, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
ব্যবসা: ব্যবসায় কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং, এবং যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ERP) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবসার সমস্ত কার্যক্রম একসঙ্গে পরিচালনা করা যায়।

স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবায় রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণ, চিকিৎসা গবেষণা, এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিচালনায় কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
বিনোদন: কম্পিউটার বিনোদনের জন্যও ব্যবহৃত হয়, যেমন গেম খেলা, মুভি দেখা, এবং সঙ্গীত শোনা।
যোগাযোগ: ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

কম্পিউটারের সুবিধা ও অসুবিধা

কম্পিউটারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে, যেমন-
দ্রুততা: কম্পিউটার অতি দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে।
নির্ভুলতা: কম্পিউটার অত্যন্ত নির্ভুলভাবে কাজ করে।
স্টোরেজ ক্ষমতা: কম্পিউটার বিশাল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
অটোমেশন: কম্পিউটার বিভিন্ন প্রক্রিয়া অটোমেটিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন-
নির্ভরশীলতা: আমরা অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।
বেকারত্ব: কম্পিউটারাইজেশনের কারণে কিছু ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।

লেখকের কথা 

কম্পিউটার আধুনিক যুগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এটি আমাদের জীবনকে সহজতর ও সুবিধাজনক করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করেছে এবং আমাদের কাজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেছে। তবে, আমাদের উচিত সঠিকভাবে এবং সুরক্ষিতভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করা যাতে এটি আমাদের জন্য সবসময় উপকারী হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url